বাংলাদেশ রবিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১

সাবদির ফুলের রাজ্যে সৌন্দর্যের মুগ্ধতা, ব্যবসায়ীদের দুশ্চিন্তা

দৈনিক প্রথম সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৫, ০৫:৪৯ পিএম

সাবদির ফুলের রাজ্যে সৌন্দর্যের মুগ্ধতা, ব্যবসায়ীদের দুশ্চিন্তা

মাঠজুড়ে ফুল, দেখতে ভিড় দর্শনার্থীদের।

ফুল ভালোবাসেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। হাজার বছর ধরে ফুলকে সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। সৌরভে মোহিত হয়ে মানুষ ছুটে যায় ফুলের রাজ্যে। নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের সাবদি গ্রাম ঠিক এমনই এক স্বপ্নিল জায়গা, যেখানে ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে প্রতিদিন ভিড় করেন শত শত দর্শনার্থী।

সাবদির প্রায় প্রতিটি মাঠ, আঙিনা, এমনকি বাড়ির ছাদেও দেখা মেলে বাহারি ফুলের বাগান। লাল, হলুদ, বেগুনি ও সাদা রঙের ছোট-বড় ফুলে ভরে থাকে চারপাশ। শীতের শেষে ও বসন্তের শুরুতে ফুল ফোটার মৌসুমে দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা আসেন এই গ্রামে। বিশেষ করে পয়লা ফাল্গুন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘিরে ফেব্রুয়ারি মাসে পর্যটকের সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে যায়।

ঢাকা থেকে আসা দর্শনার্থী ড. মেহজাবীন বলেন, "শীতের শেষ আর বসন্তের শুরুতে ফুলের এই সৌন্দর্য দেখার মজাই আলাদা। প্রতিবছরই আমি এখানে আসি, ফুলের সৌন্দর্য আমাকে মুগ্ধ করে।"

আরেক দর্শনার্থী সুরভী আক্তার বলেন, "ফুল আমাদের মন ভালো করে দেয়। সাবদির পরিবেশ খুব সুন্দর, তাই এখানে আসতে ভালো লাগে।"

ফুলচাষ সাবদির প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। প্রতিবছর কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয় এই অঞ্চলে। তবে এবার ব্যবসায়ীদের মধ্যে কিছুটা অস্বস্তি দেখা যাচ্ছে। ফুল ব্যবসায়ী আক্তার হোসেন জানান, গত বছর এই সময় রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ফুলপ্রেমীরা আসতেন এবং প্রচুর ফুল বিক্রি হতো। তবে এবার সে দৃশ্য কিছুটা ফিকে।

বন্দর উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. ইয়াছিন আরাফাত বলেন, "এ বছর বন্দর উপজেলার সাবদি, মীরকুন্ডি ও দিঘলদীসহ কয়েকটি গ্রামে ৮০ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়েছে। তবে রমজান মাসের কারণে ফেব্রুয়ারি ও মার্চের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নাও হতে পারে। তারপরও আবহাওয়া ভালো থাকায় ফুলের উৎপাদন সন্তোষজনক।"

বন্দর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার জানান, "প্রতিবছর পয়লা ফাল্গুন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে প্রায় ৫-৬ কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা থাকে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা কিছুটা বিপাকে রয়েছেন।"

সাবদির ফুলচাষীরা আশাবাদী, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বাজার আবার চাঙা হবে। ফুলের চাহিদা বাড়লে ব্যবসার গতি ফিরবে। তবে কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, ফুল সংরক্ষণ, রপ্তানি ও বাজার ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন করলে এই শিল্প আরও লাভজনক হতে পারে।

ফুলের সৌন্দর্যে মোহিত দর্শনার্থীরা যেমন মুগ্ধ হয়ে ফিরছেন, তেমনি ব্যবসায়ীরা প্রত্যাশা করছেন বাজার আবার চাঙ্গা হবে। সময়ই বলে দেবে, ফুলের রাজ্যে লাভের ফুল কতটা প্রস্ফুটিত হবে।

Link copied!

সর্বশেষ :