গাজীপুরে আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলার ঘটনায় গত দুই দিন ধরে শহরে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল। শুক্রবার সন্ধ্যায় ধীরাশ্রম এলাকার দক্ষিণখানে মোজাম্মেল হকের বাড়িতে একদল ব্যক্তি হামলা চালায়, যা দ্রুতই উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি করে। সেই সময় পাশের মসজিদ থেকে একটি ঘোষণা শোনা যায়, যাতে বলা হয়, `মন্ত্রীর বাড়িতে ডাকাত পড়েছে, গ্রামে ডাকাত পড়েছে, গ্রাম রক্ষা করো।` এই ঘোষণা শুনে স্থানীয়রা বাড়িটি ঘিরে ফেলে এবং সেখানে লুটপাটের ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়। পরে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা দাবি করেন যে, সাবেক মন্ত্রীর বাড়িতে লুটপাট হচ্ছে শুনে তারা সেখানে যান এবং সেই ঘটনা প্রতিহত করার চেষ্টা করেন। এর মধ্যে, কিছু শিক্ষার্থী ওই বাড়ির আশপাশে পৌঁছে, এবং তারা বাধা দিলে পেছন থেকে আরও অনেক লোক তাদের ওপর হামলা চালায়।
এই ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার রাতে বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। ছাত্র আন্দোলন এবং স্থানীয়রা এতে অংশ নেন, দাবি জানিয়ে যে তারা এই ধরনের হামলা ও সহিংসতার বিরুদ্ধে। পরিস্থিতি দ্রুত জটিল হয়ে ওঠে, এবং আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে শহরের অন্যান্য অংশে। পুলিশ এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে, কিন্তু হামলার পরবর্তী প্রতিক্রিয়া শহরজুড়ে দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে, গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান সাংবাদিকদের জানান, শনিবার রাত থেকে শুরু হওয়া `অপারেশন ডেভিল হান্ট` নামে একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এই অভিযানে এখন পর্যন্ত ৮২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং আরও কিছু সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন যে, গাজীপুরে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করার জন্য প্রচুর অস্ত্র ঢুকানো হচ্ছে, এবং পুলিশ এসব অস্ত্র শনাক্ত ও আটক করার জন্য কাজ করছে।
অপরদিকে, গাজীপুরের সহকারী পুলিশ কমিশনার আমির হোসেন জানিয়েছেন, অভিযানের পর পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। "আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সব জায়গায় অবস্থান করছে। আজ আর কোনো মিছিল বা সমাবেশ হয়নি, এবং এখন পর্যন্ত আর কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি," তিনি বিবিসি বাংলাকে জানান।
এই ঘটনার পর গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি অনেক বেড়ে গেছে, এবং তারা পুরো শহরজুড়ে নিয়ন্ত্রণ রাখতে সক্ষম হয়েছে। বেশ কিছু এলাকায় পুলিশি টহল অব্যাহত রয়েছে, এবং গাজীপুরে সাধারণ মানুষ পুনরায় বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। এতে করে, স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্যও কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কারণ সাধারণ মানুষ তাদের দৈনন্দিন কাজকর্ম থেকে সরে গেছে। অনেক বাড়ি, যেগুলো বিভিন্ন নেতাদের ভাড়া দেওয়া ছিল, সেখানকার ভাড়াটিয়ারা নিজেদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে চলে গেছেন।
এদিকে, কিছু স্থানীয় সাংবাদিক জানিয়েছেন যে, তারা রবিবার সকালে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকাগুলোতে আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখেছেন। স্থানীয় নেতা-কর্মীদের বাড়িঘর এবং স্থাপনাগুলো বর্তমানে জনশূন্য। এসব স্থান থেকে বেশিরভাগ মানুষ নিরাপদ স্থানে চলে গেছে, এবং অনেকে সরে গেছেন আতঙ্কের কারণে। তবে, বর্তমানে পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়ে আসছে এবং শহরজুড়ে শান্তিপূর্ণ অবস্থা বজায় রয়েছে।
এছাড়া, পুলিশ কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান দাবি করেছেন যে, গাজীপুরে নিরাপত্তার পরিস্থিতি আরও উন্নত করতে আরও বিশেষ অভিযান চালানো হবে। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পুরো শহরজুড়ে সজাগ থাকবে এবং যেকোনো অস্থিতিশীলতা মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকবে। এছাড়া, গাজীপুরের শহরের সড়কগুলোতে চলমান যানবাহন এবং অন্যান্য সাধারণ কার্যক্রম পুনরায় স্বাভাবিক হয়ে আসছে।
অবশেষে, গাজীপুরে বর্তমানে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়েছে এবং পুলিশ বাহিনী পুরো এলাকায় তৎপর রয়েছে। জনগণের মধ্যে আতঙ্ক কমে এসেছে এবং শহরের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
আপনার মতামত লিখুন :