দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী, যাকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য একসময় "স্বপ্নের দ্বীপ" বলা হতো, সেখানে বর্তমানে মাদকের ভয়াবহতা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষত, যুবসমাজের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ মাদকের করাল গ্রাসে নিমজ্জিত হচ্ছে, যা শুধু তাদের ব্যক্তিগত জীবন নয়, সামগ্রিক সমাজকেও বিপর্যস্ত করছে।
মাদকের এই প্রভাব নিয়ে স্থানীয় যুব ও ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে গভীর ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাদের অভিযোগ, মাদকবিরোধী কার্যক্রমে প্রশাসনের দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই। তরুণ প্রজন্মকে মাদকের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য প্রশাসনের অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে দাবি করা হয়েছে।
যুব ও ছাত্র সংগঠনের উদ্যোগ
মাদকের বিস্তারের বিরুদ্ধে একাত্মতা ঘোষণা করে, গত ৯ জানুয়ারি, ২০২৫ তারিখে কুতুবজোম ইউনিয়নের যুব ও ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিরা মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন। তারা প্রশাসনের কাছে মাদক, জুয়া, এবং অন্যান্য অপসংস্কৃতি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানান।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয় যে, রাতের বেলায় বিভিন্ন স্থানে মাদকের কেনাবেচা ও সেবন এবং জুয়ার আসর বসছে। স্থানীয় মানুষ, বিশেষ করে তরুণরা, এসব আসরে জড়িয়ে পড়ছে। এতে তাদের নৈতিক মূল্যবোধ ধ্বংস হচ্ছে এবং সমাজব্যবস্থায় এক ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হচ্ছে।
যুব ও ছাত্র সংগঠনগুলোর সদস্যরা নিজেদের প্রচেষ্টায় সচেতনতা কার্যক্রম চালাচ্ছেন। তারা স্কুল-কলেজ এবং গ্রাম পর্যায়ে মাদকের কুফল সম্পর্কে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে, তাদের মতে, এই সমস্যার সমাধানে একমাত্র প্রশাসনিক পদক্ষেপই যথেষ্ট নয়; প্রয়োজন সমাজের সর্বস্তরের সহযোগিতা।
মাদকের প্রভাব: এক গভীর সংকট
মাদক সেবন এবং ব্যবসা কেবল ব্যক্তি পর্যায়েই সীমাবদ্ধ নেই; এটি পুরো সমাজে এক ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলছে। মহেশখালীর বিভিন্ন এলাকায়, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে, মাদকের সেবন রাতের বেলায় বেড়ে চলেছে। যুবসমাজ তাদের কর্মক্ষমতা এবং সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ হারিয়ে ফেলছে।
মাদক ব্যবসায়ীরা এলাকার তরুণদের সহজ লক্ষ্যবস্তু হিসেবে ব্যবহার করছে। অনেক পরিবার তাদের সন্তানদের এই ধ্বংসাত্মক নেশা থেকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হচ্ছে। শুধু তাই নয়, মাদক সেবন ও ব্যবসার কারণে স্থানীয় জনজীবন অস্থির হয়ে পড়েছে।
প্রশাসনের ভূমিকা: নীরবতা ও উদাসীনতা
অভিযোগ রয়েছে যে, স্থানীয় থানা প্রশাসন এবং অন্যান্য দায়িত্বশীল সংস্থাগুলো মাদকের বিস্তার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মাদকবিরোধী অভিযানের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বরং মাদক ব্যবসায়ীদের অনেকেই ক্ষমতাসীন দলের বা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থাকায় তারা সহজেই আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে যাচ্ছে।
কী করণীয়
১. মাদকবিরোধী অভিযান:
প্রশাসনকে অবিলম্বে একটি ব্যাপক মাদকবিরোধী অভিযান শুরু করতে হবে। বিশেষ করে রাতের বেলায় যেখানে মাদক সেবন এবং ব্যবসা চলছে, সেই এলাকাগুলোতে নজরদারি বাড়াতে হবে।
২. স্থানীয় সচেতনতা বৃদ্ধি:
কেবল প্রশাসনের উদ্যোগ যথেষ্ট নয়; প্রয়োজন স্থানীয় জনগণের সচেতনতা। স্কুল, কলেজ, এবং মসজিদসহ বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানে মাদকের কুফল সম্পর্কে প্রচারণা চালাতে হবে।
৩. যুব সংগঠনের ভূমিকা জোরদার করা:
স্থানীয় যুব ও ছাত্র সংগঠনগুলো ইতোমধ্যেই মাদকের বিরুদ্ধে কার্যক্রম চালাচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকে সহযোগিতা এবং প্রশিক্ষণ দিয়ে আরও কার্যকর করা যেতে পারে।
৪. কঠোর আইন প্রয়োগ:
মাদক ব্যবসায়ী এবং সেবনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরি করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
৫. অভিযোগ গ্রহণ এবং গোপন তথ্য ব্যবস্থা:
মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে প্রশাসনকে একটি গোপন অভিযোগ ব্যবস্থা চালু করতে হবে। এতে জনগণ নির্ভয়ে তথ্য দিতে পারবে।
এলাকাবাসীর আবেদন
মহেশখালীর সাধারণ জনগণ এবং যুব সংগঠনগুলো প্রশাসনের কাছে জোরালো দাবি জানিয়েছে যে, মাদকবিরোধী কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার দিয়ে একটি সুসংগঠিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হোক। এই পরিকল্পনার মধ্যে কেবল মাদক সরবরাহ বন্ধ করাই নয়, বরং মাদকাসক্তদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত।
আপনার মতামত লিখুন :