ফেনী জেলায় সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় একদিনে ৮ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও ছাগলনাইয়া উপজেলায় এসব দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৬-৭ জন।
সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে ফেনীর ছনুয়ার দক্ষিণ মাইজবাড়িয়া হাফেজি মাদরাসা এলাকায় নির্মাণশ্রমিক বহনকারী একটি পিকআপে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি কাভার্ড ভ্যান সজোরে ধাক্কা দিলে ছয়জন নির্মাণশ্রমিকের ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন—ভোলা জেলার মনপুরা থানার মো. ফারুকের ছেলে মো. আরিফ (২২), একই থানার নুর আলমের ছেলে মহিউদ্দিন (৩৫), বাগেরহাট জেলার নাজমুল শেখ, নোয়াখালী জেলার হাতিয়ার জুবায়ের (৩৫)। দুর্ঘটনায় নিহত বাকি দুইজনের নাম ও পরিচয় এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন অন্তত ৬-৭ জন। আহতদের মধ্যে জাহাঙ্গীর (৩০), মনির (৪০), সবুজ (২৫) ও নাগর মাঝি (৪০) গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তারা সবাই ভোলা জেলার বাসিন্দা বলে জানা গেছে।
এ দিন সকালেই ফেনী জেলার মোহাম্মদ আলী এলাকায় আরেকটি দুর্ঘটনা ঘটে। মরদেহবাহী একটি দ্রুতগতির অ্যাম্বুলেন্সের চাপায় হৃদয় (২৮) নামের এক যুবক প্রাণ হারান। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সকালে ছাগলনাইয়া উপজেলার বক্তার হাট এলাকায় একটি ভটভটির সঙ্গে সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংঘর্ষ হলে ফুলগাজী উপজেলার রৌশনাবাদ একাডেমির প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ করিম উল্লাহ (৬৫) প্রাণ হারান। পরিবারিক সূত্রে জানা যায়, করিম উল্লাহ বাড়ির কাজের জন্য শ্রমিক আনতে ছাগলনাইয়া গিয়েছিলেন। বাড়ি ফেরার পথে বক্তার হাট এলাকায় ভটভটির ধাক্কায় তিনি গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফেনীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আরিফুল ইসলাম সিদ্দিকী জানান, ছনুয়ার দুর্ঘটনায় নিহত পাঁচজনের মরদেহ উদ্ধার করে ফেনী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। কাভার্ড ভ্যানের চালক দুর্ঘটনার পরপরই পালিয়ে গেছেন। তাকে ধরতে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
ফেনী জেনারেল হাসপাতাল ও ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।
পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে, দুর্ঘটনার পেছনে অতিরিক্ত গতি ও যানবাহনের ফিটনেসজনিত ত্রুটি দায়ী। এছাড়া, কিছু ক্ষেত্রে চালকদের অসাবধানতাও বড় কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
ফেনীর স্থানীয় বাসিন্দারা একদিনে এতগুলো প্রাণহানির ঘটনায় শোকাহত। দুর্ঘটনাগ্রস্ত এলাকাগুলোতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্থানীয়রা সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে ফেনী জেলা পুলিশ ইতোমধ্যেই মহাসড়কে যানবাহনের গতিনিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরিফুল ইসলাম জানিয়েছেন, মহাসড়কে চালকদের প্রশিক্ষণ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশেষ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হবে।
একদিনে এই মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনায় ফেনী জেলাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিহতদের পরিবার ও আহতদের প্রতি প্রশাসন ও স্থানীয় বাসিন্দারা সমবেদনা জানিয়েছেন। দুর্ঘটনা রোধে প্রশাসনের উদ্যোগ এবং জনসচেতনতার মাধ্যমে ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :